Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লবণাক্ততা রোধ করে মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ

লবণাক্ততা রোধ করে মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ

প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন সুমন১ এ.বি.এম মাসুদ হাসান২

বাংলাদেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৭,৯৬,৮৯২ হেক্টর। বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনে মাটির অবক্ষয়ের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। কৃষি জমির অবক্ষয়ের অন্যতম একটি উপাদান মাটির লবণাক্ততা। বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলা বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এ দেশের মোট উপকূলীয় জমির পরিমাণ ২৮.৬ লক্ষ হেক্টর। তার মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ত কবলিত জমির পরিমাণ ১০.৫৬ লক্ষ হেক্টর।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় মাটির লবণাক্ততা শুরু হয় মোটামুটি ডিসেম্বর মাস হতে এবং বেড়ে আস্তে আস্তে মে-জুন মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হবার আগ পর্যন্ত লবণাক্ততা বেড়ে চলে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হলে মাটির লবণাক্ততা কমতে শুরু করে। তাই বলা চলে, এই এলাকায় বর্ষা মৌসুমে (খরিফ-২) যখন মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা থাকে না তখন একটি মাত্র ফসল রোপা আমন চাষ হয়। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে এই এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত থাকে। এ এলাকায় প্রধান ফসলধারা  হলো রোপা আমন-পতিত-পতিত। এ অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অনাবাদি মৌসুমি পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা বড় চ্যালেঞ্জ।
মাটি ও পানিতে সোডিয়াম (ঘধ+), ক্যালসিয়াম (ঈধ২+) ও ম্যাগনেসিয়াম (গম২+) ক্যাটায়ন এবং সালফেট (ঝঙ৪২-), বাইকার্বোনেট (ঐঈঙ৩-) ও ক্লোরিন (ঈষ-) অ্যানায়নের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিকে মাটি বা পানির লবণাক্ততা বলে। যদি মাটিতে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ ২ ডেসিসিমেন/মিটারের বেশি হয় তখন তাকে লবণাক্ত মাটি বলে। অন্যদিকে পানিতে যদি ০.৭৫ ডেসিসিমেন/মিটারের বেশি থাকে তখন তাকে লবণাক্ত পানি বলে। মাটির লবণাক্ততার শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী ফসলের ওপর প্রভাব সারণি-১ এবং সেচ উপযোগিতা অনুসারে পানির লবণাক্ততার শ্রেণিবিভাগ সারণি-২ দ্রষ্টব্য।
বাংলাদেশের লবণাক্ততা কবলিত এলাকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৩ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮,৩৩,৪৫০ হেক্টর। যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০০ সালে ১০,২০,৭৫০ হেক্টর এবং ২০০৯ সালে ১০,৫৬,২৬০ হেক্টর হয়। লবণাক্ততার প্রধান কারণগুলো হলো- উজান হতে বয়ে আসা পানির স্বল্পতা; স্লুইসগেট ও পোল্ডার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি;  অরক্ষিত এলাকায় নিয়মিত লবণযুক্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ;  চিংড়ি চাষের উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে লবণযুক্ত পানির প্রবেশ;  অনিয়মিত বৃষ্টিপাত; ভূপৃষ্ঠস্থ মিষ্টি পানির অভাব;  অনেক নিচে ভূগর্ভস্থ মিষ্টি পানির অবস্থান;   মাটিতে আর্দ্রতার অভাব;  কৈশিক রন্ধ (মাটির ফাটল/ছিদ্র) দিয়ে লবণ পানির মাটির উপরিস্তরে উঠে আসা; পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব ।
আমাদের সার্বিক কৃষি উন্নয়নে লবণাক্ত মৌসুমি পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য উচ্চপর্যায় থেকে স্থানীয়পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে ল্যান্ড জোনিং আইন প্রণয়ন করে কৃষি জমি, চিংড়ি চাষের জমি, বনাঞ্চল, বসতবাড়ি, নগর, বাণিজ্যিক এলাকা ইত্যাদি বিভিন্ন অংশে ভাগ করে জমি ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। একইসাথে উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় ফসল উৎপাদনের জন্য মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন রকম ব্যবস্থাপনা নিতে হবে। বৃহৎ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদ্র পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে এই লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা করতে হবে। বৃহৎ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে- প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ স্থাপন, বাঁধের মধ্যে স্লুইস গেইট স্থাপন এবং স্লুইস গেটগুলো নিয়মিত পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। ক্ষুদ্র পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ বলতে লবণাক্ততা মাটির ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের কৌশলকে বুঝায়। লবণাক্ততা মাটির ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো হলো-
মাদা (ঢ়রঃ) পদ্ধতি : শুষ্ক মৌসুমে পানি কম গ্রহণকারী মাদা ফসল চাষ করতে হবে। ভালভাবে চাষকৃত জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে ৩০-৫০ সেমি. ব্যাসার্ধে মাদা করে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা হয়। পরে সমস্ত জমি নাড়া বা খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাদায় এভাবে তরমুজ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, করলা ইত্যাদি চাষ করা যায়। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ত এলাকায় মাদায় ফসল জন্মানোর মাধ্যমে একদিকে যেমন মিষ্টি পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয় অন্যদিকে মাটির লবণাক্ততা কমানো সম্ভব হয়।  
মালচিং ও দ্বিস্তর মালচ পদ্ধতি : মাদা তৈরির সময় প্রথমে কর্ষণ তলের ওপর পর্যন্ত মাটি সরিয়ে পাশে রাখতে হবে। অতঃপর কর্ষণ তলের উপরে মালচ (যেমন-ধানের খড়, ধানের চিটা, শুকনো কচুরিপানা ইত্যাদি) প্রয়োগ করে পাশে রাখা মাটি দিয়ে মাদা ভরাট করে মাটির উপরে আবার মালচে প্রয়োগ করতে হবে। এইভাবে দ্বিস্তর মালচের মাদা প্রস্তুত হবে। মাটির উপরের মালচ হিসাবে যদি ধানের চিটা প্রয়োগ করা হয় তবে এই মাদাতেই মাদা ফসলের বীজ বপন করা যাবে। আর মাটির উপরে ধানের চিটা ছাড়া অন্য মালচ প্রয়োগ করতে চাইলে আগে বীজ বপন করতে হবে এবং চারা গজানোর ১০-১৫ দিন পরে মাটির ওপরে মালচ্ প্রয়োগ করতে হবে। লবণাক্ত এলাকার মাটিতে দ্বিস্তর মালচ্ প্রয়োগ করা হলে মাটির নিচের স্তর থেকে লবণযুক্ত পানি কৌশিক রন্ধ্র্র (মাটির ফাটল/ছিদ্র) দিয়ে উপরে আসতে প্রথমে নিচের স্তরের মালচ এবং পরে উপরের মালচ বাধা প্রদান করে। অধিকন্তু মাদায় ‘জো’ অবস্থা বজায় থাকার কারণে মাটির উপরে বাষ্পীভবনজনিত লবণ জমা হ্রাস পায়। মাদা ফসল যেমন-মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, বাঙ্গী, উচ্ছে, ঝিঙা, খিরা ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য এই প্রযুক্তি উপযোগী।
রিজ (জরফমব) এবং ফারো (ঋঁৎৎড়)ি পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন : যেসব এলাকায় জোয়ার অথবা হঠাৎ বৃষ্টিজনিত কারণে প্লাবিত হয়ে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেইসব জমিতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে ১৫-২০ সেমি. মাটি উঁচু করে ৫০ সেমি. প্রশস্ত রিজ (লম্বা বেড) প্রস্তুত করতে হবে। একটি আদর্শ বেডের দৈর্ঘ্য ৫-৬ মিটার। দুই বেডের মাঝে ৫০ সেমি. ফারো (ঋঁৎৎড়)ি/সমতল ভূমি রাখতে হবে। রিং বেড প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ১৫-২০ সেমি. মাটি উঁচু করে ৫০ সেমি. ব্যাসের মাদা প্রস্তুত করতে হবে। একটি রিং বেড থেকে আরেকটি রিং বেডের দূরত্ব ফসল ভেদে ১.২৫-২.০ মিটার হবে। দুই রিং বেডের মাঝের জমি সমতল রাখতে হবে। অতঃপর প্রস্তুতকৃত রিজের উপর ফসলের বীজ বপন করতে হবে। লবণাক্ত এলাকায় রিজ এবং ফারো প্রযুক্তি মাটির নিচের স্তর থেকে লবণযুক্ত পানি কৌশিক রন্ধ্র দিয়ে উপরে আসতে বাধা প্রাপ্ত হয়। ফলে পতিত জমিতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে লবণাক্ততার মাত্রা কমিয়ে রেখে অনেক জমি ফসল চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
সর্জন (ঝধৎলধহ) পদ্ধতির প্রচলন করা : লবণাক্ত এলাকার নিচু জমিতে সর্জন পদ্ধতি অবলম্বন করে বিভিন্ন সবজি ফসলের চাষ করা যায়। এক্ষেত্রে ৪-৫ হাত চওড়া ও ৪-৫ হাত গভীর করে মাটি কেটে পাশে ৪-৫ হাত চওড়া জায়গায় রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমে ৪-৫ হাত গভীর গর্ত এবং ৪-৫ হাত চওড়া উঁচু বেড তৈরি হয়। আর বেডের দৈর্ঘ্য ইচ্ছামত কম বা বেশি করা যায়। সর্জন পদ্ধতিতে বেডের ওপর লবণাক্ততার মাত্রা কম থাকে। ফলে এই পদ্ধতিতে গর্তে বর্ষাকালের মিষ্টি পানি (অলবণাক্ত পানি) সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে বেডের ওপর সহজে সবজি জাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব।
সংরক্ষিত অলবণাক্ত পানির ব্যবহার : বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি (অলবণাক্ত পানি) পুকুর/খাল/কুনিতে সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ ছাড়াও রয়েছে ডিবলিং পদ্ধতিতে বীজ বপন, কলস সেচ পদ্ধতিতে চাষ, জৈবসার বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করা, লবণ সহিষ্ণু ফসল ও ফসলের জাত নির্বাচন করে চাষ করতে হবে।
উল্লেখিতভাবে লবণাক্ততা রোধের মাধ্যমে লবণাক্ত এলাকায় ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। য়

লেখক : মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ। মোবাইল : ১৭১৮৩৮৬১৬১, ই-মেইল: যধনরনংড়.নফ@মসধরষ.পড়স

আপডেট চলমান


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon